দল থেকে বহিষ্কার, মামলা করেও বিএনপি নেতাকর্মীর একাংশকে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যের মতো অপকর্ম থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিএনপি নেতাকর্মীকে ইঙ্গিত করে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের কথা বললেও কাউকে ধরছে না পুলিশ। শাস্তির ক্ষেত্রে বিএনপিতেও দেখা যাচ্ছে দ্বৈতনীতি। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ পাওয়ামাত্র সাজা দিলেও প্রভাবশালী অনেকের ক্ষেত্রে তেমনটা হচ্ছে না। আবার কিছু ক্ষেত্রে দলীয় কোন্দলে নেতারা একে অপরকে অপকর্মের অপবাদ দিচ্ছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যের অসংখ্য অভিযোগ আসে। ভাবমূর্তি রক্ষায় কঠোর হয় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিকবার হুঁশিয়ারিও দেন।
একাধিক নেতার দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিকে চাঁদাবাজ, দখলদারের দল হিসেবে দেখাতে অতিরঞ্জিত প্রচারণা চলছে। নির্বাচনে সুবিধা পেতে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্ব সামাজিক মাধ্যমে তা চালাচ্ছেন। বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি করায় উপদেষ্টারাও একই ভূমিকা নিয়েছেন। সম্প্রতি তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সড়কে আগের মতো চাঁদাবাজি চলছে। এখন অন্য দল করছে।’
বিএনপি নেতাদের প্রশ্ন, সরকার চাঁদাবাজের পরিচয় জানলে ধরছে না কেন? তবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দেয়নি। বহিষ্কার ও মামলা করলেও নেতাদের কেন ধরা হচ্ছে না– প্রশ্নে পুলিশের মুখপাত্র ইনামুল হক সমকালকে বলেন, অপকর্মে জড়িত কারও দল দেখা হচ্ছে না। মামলা থাকলে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলার আগেই ধরা হচ্ছে। তবে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত। তবে যেসব ঘটনায় সত্যতা পাওয়া গেছে, শাস্তি হয়েছে। নেতাকর্মী ১৭ বছরের নির্যাতনের ক্ষোভ থেকে অনেকে ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ছাড় দেয়নি বিএনপি।
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৩১ নেতাকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১ হাজার ২০৩ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়েও অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনও শত শত নেতাকর্মীকে শাস্তি দিয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশের বিরুদ্ধেই দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল।
বিএনপি নেতাকর্মী জানান, দখল ও চাঁদাবাজির মামলা হলেও দলে যারা প্রভাবশালী, তাদের শাস্তি হয়নি। অভিযোগ আসার পর ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটিই বিলুপ্ত করে দেয় বিএনপি। তবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের এক প্রভাবশালীর নেতার কিছুই হয়নি।
এ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এস আলমের পক্ষ নিয়ে ইসলামী ব্যাংক দখলের চেষ্টার পর ১০ ডিসেম্বর অস্ত্রসহ তাঁর ১৭ থেকে ১৮ অনুসারীকে নিয়ে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কার্যালয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ধরে খুঁজতে থাকে তারা। এ ঘটনায় কোম্পানি কর্মকর্তা মহিবুল্লাহ বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙচুর চালানো হয়। টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করা হয়। হামলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তদন্ত কমিটি করে যুবদল দক্ষিণ। স্থানীয় চার নেতাকে অব্যাহতি দিলেও প্রভাবশালী সেই নেতার কিছুই হয়নি।
বাগেরহাটে অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে। অর্থনৈতিক তথ্যশুমারিতে অনুসারীদের না নেওয়ায় রামপালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তাঁর হুমকি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, কিছু ঘটনার তদন্ত হয়নি। এতে দল কাঠগড়ায়। গত শনিবার বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক এক টিভি টকশোতে জানান, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় পদধারী নেতারা, কেউ মাটি ভরাট করে নদীর জমি দখল করে, আরেক উপজেলায় পদধারী নেতারা মামলা বাণিজ্য করে। কেন্দ্রে খবর পাঠানো হয়েছে, ব্যবস্থা নেয়নি। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। কেউ কেউ আবার অতি আশীর্বাদপুষ্ট, তাদের কিছুই হচ্ছে না। নেতাকর্মীরাও দ্বিধান্বিত, কেন্দ্র যা বলে তা কি সিরিয়াসলি বলে?’
বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেছেন, মনোনয়ন কোন্দলেও নেতারা একে অপরকে অপকর্মের অপবাদ দিয়ে ঘায়েলের চেষ্টা করছেন। তাই আগে ঢালাও ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এখন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শাস্তির পরও চাঁদাবাজি
খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর চাঁদার জন্য কয়রা বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন বাবুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়। তিনি দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার হয়েছেন। বহিষ্কার করা হয়েছে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকসহ একাধিক নেতাকে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে খুলনা জেলা বিএনপির কমিটি। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। একের পর এক শাস্তি, মামলায়ও চাঁদা, ঠিকাদারি বাটোয়ারা ও ইজারা দখলের অভিযোগ বারবার আসছে।
দলীয় সূত্রে জানায়, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা ও নগর বিএনপিতে শতাধিক অভিযোগ এসেছে। ৬৪ জনকে শোকজ এবং ২৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তেরখাদায় হাসান আল মামুন নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করে ১৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাবু মোল্লা, সদস্য ফেরদৌস মেম্বার, গাউস মোল্লা ও রবিউল ইসলাম লাকুকে শোকজ করা হয়।
৪ নভেম্বর তেরখাদায় ২০৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য আজিজুল হাকিম। এই মামলাকে ব্যবহার করেও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেটার তদন্ত করছে বিএনপি।
ফুলতলায় বিজয় মেলার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি দিয়ে কুপন বিক্রির খবর সমকালে প্রকাশের পর গত ১৪ ডিসেম্বর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আবুল বাশার ও সদস্য সচিব মনির হাসান টিটোকে শোকজ করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
খুলনা মহানগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতা। ঘটনা সত্য হলেও ভুক্তভোগী ঠিকাদার মামলার ভয়ে অস্বীকার করেছেন।
চাঁদাবাজির সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে দিঘলিয়া থেকে। সেখানে তিন মাসে পাঁচ মামলা হয়েছে। এসব মামলার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ মিলেছে।
খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু বলেন, অপকর্ম করলে ছাড় নেই। দুটি উপজেলার সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার, এক উপজেলার আহ্বায়ককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, দলীয় সেলে আসা প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ এখন নিয়ন্ত্রণে।
নগদ আয়ের সব উৎস বিএনপির দখলে
বরিশাল ব্যুরো জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের পতনের পর মহানগর ও জেলার খেয়াঘাট, হাট-বাজার, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, বালুমহাল, নদীর তীরের মাছঘাট, চর– সবকিছুই আওয়ামী লীগ হটিয়ে দখল নিয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনের পদ স্থগিত, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা সভাপতি রুহুল আমিন দুলাল ও বরিশালের আগৈলঝাড়ার ছাত্রদলের আহ্বায়ক মফিদুল মোল্লা, মেহেন্দীগঞ্জ ছাত্রদলের সদস্য সচিব জুবায়ের মাহমুদ ও জেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মাহমুদ হাসানকে বহিষ্কারেও দখলবাজরা দমেনি। স্থানীয়রা জানান, নগদ আয়ের সব উৎস দখল হয়েছে। দখল যেই করুক, স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব ভাগ পায়। বেশি জানাজানি হলে দায়সারা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে শান্ত করতে।
বরিশালে বিএনপি কয়েকটি উপদলে বিভক্ত। একপক্ষ দখল করলে আরেক পক্ষ তা সামাজিক মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ করে। রূপাতলী বাস টার্মিনালের দখল নিয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিনের প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। জিয়াকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিচ্ছেন নাসরিন।
সন্ধ্যা নদীর খেয়াঘাট জেলা পরিষদ থেকে ৭৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছিলেন যুবলীগকর্মী আরিফুল হক। ৫ আগস্ট বিকেলে তা দখল করেন বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সবুর খান। আরিফুল সমকালকে বলেন, ঘাট উদ্ধারে জেলা পরিষদসহ সব দপ্তরে আবেদনেও লাভ হয়নি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের অভিযোগ, তাঁর নির্বাচনী এলাকার হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জের সব দখল করেছে একটি পক্ষ। কেন্দ্রে অনেক অভিযোগ পড়েছে। এখন পর্যন্ত একজনকেও শাস্তি দেওয়া হয়নি।
সিলেট ব্যুরো জানিয়েছে, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সমকালকে জানিয়েছেন, শাস্তি দেওয়ায় এখন অভিযোগ কমই আসছে। নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণে আছে।
যাদুকাটা নদী বালুমহালসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গত ৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রে অভিযোগ করেন সুনামগঞ্জ তাহিরপুরের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন। জাফলং পাথর কোয়ারি লুটপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানসহ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে। গত ১৪ অক্টোবর শাহপরানের পদ স্থগিত হয়। মৌলভীবাজার যুবদল সভাপতি জাকির হোসেন উজ্জলের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলের কালাপুর গ্যাস ফিল্ডের কাজ বাগিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষকে হুমকির অভিযোগ করা হয়। হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশিমও বহিষ্কার হয়েছেন।
চাঁদাবাজি, চোরাচালানসহ চার মাসে ২০টির বেশি অভিযোগ এলেও সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ সমকালকে বলেন, কিছু অভিযোগের তদন্ত চলছে।
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জি কে গউছ ও তাঁর ভাই জি বে গাফফারের বিরুদ্ধেই দখল এবং দলীয় প্রতিপক্ষের অনুসারীদের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেছেন নিজ দলের কর্মীরা। ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদকে হুমকি, হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আইসিইউ ভবন নির্মাণের জন্য ২০ কোটি টাকার প্রকল্প পছন্দের কোম্পানিকে দেওয়ার অভিযোগও এসেছে।
অভিযোগ করা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে গুলি চালানো আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজকে মামলা থেকে বাদ দিতে জি কে গউছ সাত লাখ টাকা নিয়েছেন। হবিগঞ্জ শহরের ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতা ঝন্টু মোদককে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিয়েছেন। সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি জয়নাল মিয়া, ‘হবিগঞ্জ জিয়া সাইবার ফোর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক সাইকুল মিয়াকে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করে কেন্দ্রে চিঠি দিয়েছেন তারা।
এসব নাকচ করে জি কে গউছ বলেন, তিনবার মেয়র থাকাকালে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। ১ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। আওয়ামী লীগ ও ১/১১ সরকার অসংখ্য মামলা দিলেও চাঁদাবাজি ও দখলের মামলা নেই। আওয়ামী লীগ নেতা শাহ নেওয়াজের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আর মামলার সঙ্গে আবার সম্পৃক্ততা নেই। যারা অভিযোগ করছেন, তারা বিএনপি নেতা ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবনের অনুসারী। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে হুমকি নয়, বাঁধ মেরামতে টাকা দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।
ঘাঁটিতেও নেতারা বেপরোয়া
বগুড়ায় দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে অর্ধশত নেতাকর্মীকে। তবু নেতাকর্মীরা বেপরোয়া। শহরের চারমাথা এলাকায় সড়ক ও জনপথের কোটি টাকার জমি দখল করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সাজেদুর রহমান সাজু দলীয় সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন।
ঠনঠনিয়া এলাকায় ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে সরকারি জমিতে দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা এনামুল হক সুমন। তিনি বাসস্ট্যান্ডের চাঁদার টাকাও নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বগুড়া বিআরটিএ অফিস নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে উপপরিচালকের কক্ষের ভেতরে এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করেন জেলা বিএনপির সহকোষাধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বাকি। এর ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজশাহী বিভাগেও একাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, চাঁদাবাজি, দখল ও ভাঙচুরের অভিযোগে নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ এবং বদলগাছীর উপজেলা বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে বড় কোনো অভিযোগ নেই।
চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির ১০টি সাংগঠনিক জেলায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর অবস্থান নিয়েছেন অপকর্মের বিরুদ্ধে। সুত্র: সমকাল
পাঠকের মতামত